এবার পুলিশে নিয়োগ পাচ্ছেন দিনমজুর, কৃষক, রিকশাচালক, অটোভ্যান চালকের সন্তানসহ সাধারণ পরিবারের সন্তানরা। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী করে বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নতুন নিয়মে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশে মেধাবী ও শারীরিকভাবে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের লক্ষ্যে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা চলছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ফরিদপুর, রাজবাড়ি, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি, খুলনা, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, লালমনিরহাট ও পটুয়াখালী- এই ১০টি জেলায় স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে পার করতে হচ্ছে সাতটি ধাপ। এগুলো হলো প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং, শারীরিক মাপ ও ফিজিক্যাল এন্ডিউরেন্স টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, প্রাথমিক নির্বাচন, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ। এই সাতটি ধাপের কোনো একটিতে অযোগ্য বিবেচিত হলে তিনি আর পুলিশে নিয়োগ পাবেন না। সাতটি ধাপের প্রতিটিতে আলাদা টিম দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালনের ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা জানতে পারছেন না।
নিয়োগে দুর্নীতি, তদবির ও অনিয়মের অভিযোগ থেকে বের হতে এমন যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিধি সংশোধন করা হয়েছে। ঘুষ দিয়ে পুলিশে নিয়োগ পাওয়ার দিন শেষ। মেধাবী ও শারীরিকভাবে যোগ্যরাই নিয়োগ পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।আইজিপির দায়িত্ব পালনকালে ড. জাভেদ পাটোয়ারী পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছিলেন। তবে এবার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সাতটি ধাপে যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বাচ্ছতার এই ধারা অব্যাহত থাকলে দুর্নীতি ও অনিয়ম আর হবে না।
১০টি জেলায় কনস্টেবল (পুরুষ) পদে ৩৬৫টি পদের বিপরীতে ৩ হাজার ৫০৭ জন এবং কনস্টেবল (নারী) পদে ৬৪টি পদের বিপরীতে ৩৪৭ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছেন। এর মধ্যে কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৪২৯ জন। বর্তমান নিয়োগবিধি সংস্কার করে কনস্টেবল পদে ৭ ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত ২৫ অক্টোবর থেকে।
কোনো ধরনের তদবির বা অর্থছাড়া শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া সাধারণ পরিবারের সদস্য ও তাদের পিতা-মাতার জন্য ছিল স্বপ্ন। গ্রামের গরীব কৃষকের মেয়ে সানজিদা আক্তার। বাড়ি ময়মনসিংহ গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারি গ্রামে। ময়মনসিংহের মুসলিম গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন টিউশনি করে। বাবার ৭ সদস্যের সংসারে বড় মেয়ে সানজিদা। স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। কীভাবে চাকরি হবে এই নিয়ে দুঃচিন্তায় ছিলেন। একদিন জানতে পারেন পুলিশের চাকরি পেতে টাকা পয়সা লাগে না। আবেদনপত্র পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন, যাচাই বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেন। বিনা টাকায় চাকরি হওয়ায় তিনি অনেক খুশি। ৪ নভেম্বর চূড়ান্ত ফল ঘোষণায় নিজের নামটি শোনার পর আনন্দে কেঁদে দেন সানজিদা। মেয়ের আনন্দে আপ্লুত ও তার বাবা-মা। তার বাবা কৃষক নজরুল ইসলাম (৪৫) বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন আজকে। বিনা পয়াসায় আমার মেয়ের চাকরি হইছে।
ফুলবাড়ীয়ার বিদ্যানন্দ গ্রামের লাভলী আক্তার। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। তার বাবা আব্দুল হামিদ একজন আটোভ্যান চালক। বিনা টাকায় চাকরি হওয়ায় তিনি মাহখুশি। লাভলী আক্তার বলেন, ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। চাকরি হবে কিনা এ নিয়ে দোটানায় ছিলেন। পরে পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ সুপারের বক্তব্য শুনে টাকা পয়সা লাগবে না বুঝতে পারেন। ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়া গ্রামের দিনমজুরের ছেলে আলমগীর হোসেনও মেধা ও যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে এখন পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য।
Post a Comment