ছোট থেকেই নিজেদের আশপাশে সবচেয়ে বেশি যে কয়টি প্রাণী দেখে বড় হই, বিড়াল বোধ হয় এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। আশপাশেই থাকে, তবু যে এদের আলাদা করে যত্ন–আত্তি, এদের নিয়ে চিন্তাভাবনা এগুলো খুব বেশি পুরোনো ব্যাপার নয় আসলে। আমরা অনেকেই হয়তো জানিও না যে ৮ আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিড়াল দিবস। অথচ বিড়ালকে সঙ্গে নিয়ে, বিড়ালকে আদর করে কিংবা তাদের আঁচড়ে বিক্ষত হয়েই আমরা সবাই বড় হই।
বর্তমান সময়ে এসে পরিস্থিতি যদিও বদলে যাচ্ছে অনেকটাই। এই যে এত যান্ত্রিক ব্যস্ততা আর ইট-কাঠ-পাথরের জীবনের মাঝে একটু স্বস্তির নিশ্বাস পেতে অনেকেই আগ্রহী হন পোষা প্রাণী পালনে, বিশেষত বিড়াল বিষয়ে। তাই বিড়ালের যত্ন, পেট গ্রুমিং কিংবা ক্যাট প্যারেন্টিং শব্দগুলো আমাদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বরাবরই বেশ জনপ্রিয় ছিল এই পেট গ্রুমিং কিংবা প্যারেন্টিংয়ের ব্যাপারটি। কিন্তু আমাদের দেশে আলাদাভাবে এর তেমন প্রচলন ছিল না বললেই চলে। ইদানীং আমাদের দেশেও আস্তে আস্তে পেয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা।
শুধুই যে ঘরে এনে রাখলে আর দুবেলা খাবার দিলেই বিড়াল পালা হয় না, পোষা প্রাণী হয় না—এই ধারণার বদল হওয়া প্রয়োজনীয় ছিলই বলা যায়। পোষা প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, বিড়ালকে বড় করা অনেকটা ছোট শিশু বড় করার মতোই দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাদের লোমশ শরীরের যত্ন–আত্তির আছে নানা কৌশল, তাদের খাদ্যাভ্যাস থেকে পরিষ্কার করানো কিংবা তাদের জন্য আলাদা ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া—ক্যাট প্যারেন্ট হওয়ার আগে জেনে নেওয়া লাগে এর সবই।
এই যেমন একদম ছোট বিড়ালের বাচ্চাদের যেমন মা বিড়াল থেকে আলাদা করা একদমই উচিত নয়। প্রথমত, মা ও ভাইবোনদের শরীরের ওমেই এই ছোট্ট প্রাণীরা বেঁচে থাকার মতো দরকারি তাপ পায়। তাপ বিড়ালের বেড়ে ওঠায় ও পুরো জীবনচক্রেই যেহেতু খুব প্রয়োজনীয়, তাই মা থেকে আলাদা করে হলে অন্য বিড়ালের সঙ্গে রেখে কিংবা কৃত্রিম নানা উপায়ে তাদের জন্য দরকারি তাপের বন্দোবস্ত করা হয়।
এ তো গেল তাপের বিষয়, এর বাইরে বিড়ালের ব্রিড অনুযায়ী তাদের চাহিদাগুলো অনেক দিকেই আলাদা হয়। যেমন খাদ্যাভ্যাস কিংবা গোসল করানো এই বিষয়গুলো নানা জাতের বিড়ালে নানা রকম হয়। তাই ক্যাট প্যারেন্ট হওয়ার আগে, একটি ছোট্ট বিড়াল শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার আগেও তার বিষয়ে বেশ ভালোভাবে জেনে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া ঘুমানোর জায়গা, লিটার বক্সের ব্যবস্থা করা এবং পালন শুরুর প্রথম দিকে বিড়ালকে তার মতো মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া—এই ধরনের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার থেকেই যায়। এই মানসিকতা প্রতিটি বিড়াল পালনে আগ্রহীদেরই থাকা উচিত যে তাদের বিড়াল তাদের প্রথম দিকে ভয় পেতে পারে কিংবা নতুন জায়গার অস্বস্তি কাটাতে তার কিছুটা সময় লাগতে পারে। তাদের ছোট ছোট ভয় কিংবা সংশয় কাটিয়ে দিয়ে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই গড়ে ওঠে সুস্থ একটি পরিবেশ।
এ তো গেল সাধারণ ঘুম, খাওয়ার গল্প; এরপর থাকে তাদের লোমের যত্ন আর আঁচড়ানো কিংবা তাদের সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির ব্যাপারটি। যদিও বিড়াল নিজেই নিজের শরীর পরিষ্কার রাখতে বেশ পারদর্শী। তবে অনেক সময় তাদের গোসল কিংবা ওয়াশের প্রয়োজন হয়। খুবই নরম, তুলতুলে এবং ঠান্ডা-গরমের পার্থক্যে বেশ প্রবলভাবেই প্রভাবিত হয় বলে তাদের পরিষ্কার করানোতেও আছে নানা ঝক্কি-ঝামেলা। গরম পানিতে আলতো করে ধুয়ে নেওয়া, তাদের জন্য আলাদা সাবান–শ্যাম্পুর ব্যবস্থা করা, যা তাদের ত্বকের জন্য ভালো কিংবা পানি ঝরিয়ে যত্নের সঙ্গে তাদের লোম আঁচড়ে দেওয়া, এগুলো করতে হয় সর্বোচ্চ সাবধানতার সঙ্গে।
এই আঁচড়ে দেওয়ার নানা কৌশল আবার বিড়ালের রক্ত চলাচল ও সুস্থতার ওপরেও প্রভাব ফেলে বেশ ভালোভাবেই। এর বাইরেও এসব যত্ন–আত্তির সময়গুলো কিংবা নিয়ম করে খেলার সময়েই গড়ে তোলা যায় বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্যাট বেবি-ক্যাট প্যারেন্ট রিলেশনশিপ। এ বিষয়ে সাহায্য চাইলেও পাওয়ার আছে অসংখ্য উপায়।দেশে এখন প্রচুর ভেটেরিনারি ডাক্তার আছেন, যাঁদের ঠিকানা সংগ্রহে রাখলে চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়। এর বাইরে সাধারণ সাহায্যের জন্য ফোরাম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া তো আছেই!
বর্তমান সময়ে এসে শহুরে ব্যস্ততায় আমরা নিজেদের নিয়ে বড্ড বেশি হাঁপিয়ে উঠি প্রায়ই। ঠিক এমন সময়ে ঘরে থাকা পোষা বিড়াল বেশ অনেকভাবেই স্ট্রেস রিলিজ কিংবা মানসিক সুস্থতায় সাহায্য করে। তাই তো একটু যত্ন করে জেনে নিলে যে কেউই হয়ে উঠতে পারেন দক্ষ ক্যাট প্যারেন্ট। তবে এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয়, তা হলো মানসিক প্রস্তুতি, একটি ছোট্ট নিষ্পাপ জীবনের দায়িত্ব নেওয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। শুধুই খেলার ছলে কিংবা শখের বশে নয়, নিজের দায়িত্বগুলো বুঝে তা নিতে পারার মতো দক্ষ হয়ে তবেই ক্যাট প্যারেন্টিং শুরু করা উচিত।
Post a Comment