যন্ত্রচালিত দুইচাকার বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। শহরে, গ্রামে, হাইওয়েতে, বিনোদনে মোটরসাইকেলের জুড়িমেলা ভার। দুইচাকার আরেকটি যান্ত্রিক বাহন হলো স্কুটার। কিছু গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের কারনে সাধারন মোটরসাইকেল থেকে দেখতে এবং কাজে আলাদা। বাংলাদেশে স্কুটারের প্রচলন তেমন না থাকলেও ইদানিংকালে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। নারীদের বাহন হিসেবে প্রচলিত হলেও বর্তমানে অনেকেই এটি ব্যবহারের আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকগুলো কারনে তারমধ্যে সহজ ব্যবহার, জ্বালানি খরচ কম, আরামদায়ক ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।এখন প্রশ্ন হলো আপনি কোনটি কিনবেন? মোটরসাইকেল নাকি স্কুটার? কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে? নীচের আলোচনায় দুটি বাহনেরই ভালো এবং মন্দ দিক তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। এখান থেকেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন আপনার জন্য কোনটি ভালো হবে? মোটরসাইকেল নাকি স্কুটার?
চালানো
- মোটরসাইকেল চালানো শেখা তুলনামূলকভাবে কঠিন তার গিয়ার, ক্লাচ ইত্যাদি ব্যবহারের কারনে
- স্কুটার চালানো শেখা বেশ সহজ তার অটোমেটিক ট্রান্সমিশন থাকার কারনে
ইনজিন
- আমাদের দেশে মোটরসাইকেলে ৫০সিসি থেকে ১৫০সিসি পর্যন্ত ইনজিন ব্যবহৃত হয়।
- দেশে যে স্কুটারগুলো পাওয়া যায় তা ৫০সিসি থেকে ১৫০সিসি পর্যন্ত।
গতি
- মোটরসাইকেলের গতি বেশি পাওয়া যায়। সাধারনত ৬০কিমি থেকে শুরু করে ১৫০কিমি পর্যন্ত গতি পাওয়া যায়।
- অধিকাংশ স্কুটার একটু কম গতির হয়ে থাকে। ৫০কিমি থেকে ১৩০কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চাকার আয়তন
- মোটরসাইকেলের চাকার আয়তন একটি বড় হয় আমাদের দেশে সাধারনতই ১৭ বা ১৮ইঞ্চি হয়ে থাকে। ফলে গতি বেশি পাওয়া যায়, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশি হয়ে থাকে।
- স্কুটারের চাকার আয়তন ১৬ ইঞ্চি বা এর কম হয়ে থাকে। ফলে স্পীড এবং গ্রাউন্ডক্লিয়ারেন্স কম হয়ে থাকে। অফরোডের জন্য উপযুক্ত নয়।
হাইওয়েতে
- হাইওয়েতে স্বাভাবিকভাবেই বেশি গতির প্রয়োজনপড়ে এবং এরজন্য মোটরসাইকেল বেশ কার্যকর।
- বেশির গতির স্কুটার রয়েছে যেটি হাইওয়েতে ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু কমিউটার হিসেবেই স্কুটার বেশি প্রযোজ্য।
জ্বালানি খরচ
- গতি এবং ওজনের কারনে মোটরসাইকেলে জ্বালানি খরচ বেশি হয়ে থাকে।
- স্কুটার সাধারনতই কম জ্বালানি খরচের হয়ে থাকে।
জ্বালানি ট্যাংক
- মোটরসাইকেলের জ্বালানি ট্যাংক সাধারনতই বড় হয়ে থাকে। ফলে একবারে অনেকদূর পথ চলার উপযোগী জ্বালানি ভরে নেয়া যায়।
- স্কুটারে জ্বালানি ট্যাংক ছোট আকারের হয়ে থাকে বলে তুলনামুলক ঘনঘন জ্বালানি ভরতে হয়।
সাধারন ব্যবহার
- মোটরসাইকেল শহরে বা গ্রামে সাধারন ব্যবহার এবং ছোট খাটো মালামাল পরিবহনে কিছুটা কম উপযোগী
- কমিউটার বাইক হিসেবে ব্যবহার, ছোটখাটো মালপত্ররাখা ইত্যাদির জন্য বেশ কার্যকর। পারিবারিক বাহন হিসেবে আদর্শ।
মালপত্র ধারন
- যদিও আমাদের দেশে কিছু মোটরসাইকেলে ক্যারিয়ার রয়েছে কিন্তু অধিকাংশ মোটরসাইকেল ব্যাগ বা মালামাল নেবার জন্য আলাদা কিছু নেই, গ্র্যাবরেইলের সাথে ব্যাগ বেধে নিতে হয় যা পিলিয়নের জন্য সমস্যার কারন।
- অধিকাংশ স্কুটারেই সীটের নীচে বেশ জায়গা থাকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেবার জন্য। অনেক স্কুটারে সামনের পাদানি সমান এবং প্রসস্ত থাকে। যেখানে প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা যায়।
আরাম
- আধুনিক মোটরসাইকেলে রাইডারের পর্যাপ্ত আরাম থাকলেও পিলিওন বা সহযাত্রীর জন্য আরামের বিষয়টি তুলনামুলক কম। অনেক বাইকে পিলিয়নের বসার পর্যাপ্ত জায়গাই থাকে না।
- স্কুটারে চালক এবং পিলিয়ন উভয়ের বসার জন্য পর্যাপ্ত এবং আরামদায়ক জায়গা থাকে। অনেক স্কুটারে পেছনে ব্যাকরেস্ট থাকার কারনে পিলিয়ন খুবই আরামে বসতে পারেন। আবার প্রায় সকল স্কুটারে সামনে পা রাখার জন্য অনেক এবং আরামদায়ক জায়গা থাকে যা চালককে প্রশান্তি এনে দেয়।
বাঁক নেবার ক্ষমতা
- মোটরসাইকেলে বড় চাকা, লম্বা হইলবেইজ থাকার কারনে অল্প জায়গায় বাঁক নিতে সমস্যা হয়, বিশেষকরে শহরের ব্যস্ত রাস্তায় বেশি সমস্যায় পড়তে হয়।
- ছোট চাকা এবং কম হুইলবেজ থাকার কারনে অল্প জায়গাতেই বাঁক নেয়া যায়। যা শহরের ব্যস্ত রাস্তার জন্য সুবিধাজনক।
কনট্রোল ও নিরাপত্তা
এই বিষয়টি রাইডারের উপরেই নির্ভর করে। মোটরসাইকেল এবং স্কুটার উভয়তেই এখন শক্তিশালী ডিস্কব্রেক ব্যবহার করা হয়। তবে স্কুটারের চাকা তুলনামূলক বেশি মোটা হওয়াতে ব্রেকিং এ বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।তুলনামুলক কম গতির কারনে দুর্ঘটনায় স্কুটারে ক্ষতির পরিমানও কম।
সৌন্দর্য্য
সৌন্দর্য্য ব্যাপারটি আপেক্ষিক। তবুও
- মোটরসাইকেল হরেক ধরনের ডিজাইন এবং স্টাইলে পাওয়া যায়, তরুনদের পছন্দের কথা বিবেচনায় অনেক ডিজাইন প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে।
- বর্তমানে স্কুটারেও অনেক ডিজাইনগত বৈচিত্র দেখা যায়। আধুনিক স্কুটারগুলো অনেক স্টাইলিশ হয়ে থাকে।
পার্টস ও এক্সেসরিজ
- মোটরসাইকেলের পার্টস এবং প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজগুলো তুলনামুলকভাবে সকল জায়গাতেই পাওয়া যায়।
- স্কুটার এখনও তেমন প্রচলিত নয় বলে সকল জায়গায় তার স্পেয়ার পার্টস সহজলভ্য নয়।
জনপ্রিয় ব্রান্ড
- মোটরসাইকেলের জগতে Honda, Yamah, Suzuki, Hero, Bajaj, TVS, Runner, KEEWAY, Lifan ইত্যাদি জনপ্রিয় ব্রান্ড।
- অনেক জনপ্রিয় মোটরসাইকেল নির্মাতাদেরই স্কুটারও রয়েছে এছাড়াও ZNEN এবং SYM ব্রান্ড স্কুটারের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দাম
- তুলনামুলকভাবে মোটরসাইকেল দাম বেশি হয়ে থাকে
- স্কুটারের দাম মোটরসাইকেলের বিবেচনায় কিছু কমই বলা যেতে পারে।
পরিশেষে
আপনার প্রয়োজন যদি হয় গতির, আপনি যদি স্পোর্টস বাইক চান সেক্ষেত্রে স্কুটারের কথা না ভাবাই ভালো কিন্ত কম খরচে এবং কম ভেজালে কমিউটার বাহন হিসেবে স্কুটার আদর্শ। যদিও ইদানিংকালে কিছু স্কুটার রয়েছে যা হাইওয়েতে দ্রুতগতিতে চলার উপযুক্ত। উপরের তুলনামুলক আলোচনা থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে? মোটরসাইকেল নাকি স্কুটার।
Post a Comment